Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পতিত পুকুরে মৎস্য চাষ : দারিদ্র্য মোচনে সহায়ক

অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষত আমিষের চাহিদা মেটাতে মৎস্য সম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন বিশ্ব প্রায় সম্পূর্ণ প্রযুক্তি নির্ভর। মানুষের  জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ও চাহিদার কারণে সবক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ অনেক এগিয়ে গেছে। নতুন প্রযুক্তির বিকাশ অনেক প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধি দিয়েছে কিন্তু এসব প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের অভাবে বিকাশশীল দেশগুলোর মধ্যে আমরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছি। এ দেশে আগের তুলনায় মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পেলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দেশের সব জলাভূমিতে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা গেলে মৎস্য সম্পদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সারা বিশ্বের উৎপাদন কৌশল এখন বাণিজ্যভিত্তিক। কম শ্রম ও পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক মুনাফা অর্জন এর মূল লক্ষ্য। মৎস্য সম্পদের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম নেই। বিশ্বের সব দেশে এখন আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত জাতের মাছ চাষ হচ্ছে। গড়ে উঠেছে উন্নত মৎস্য খামার।


কৃত্রিম প্রজনন মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ব্যাপক স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উন্নত জাতের মৎস্য চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে প্রজননের মাধ্যমে সরকারি মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার রয়েছে। পুষ্টিহীনতা দূর করতে বর্তমানে সারা দেশে যে পরিমাণ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম উৎপাদিত হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি জনগণকে উদ্যোগী হতে হবে। গড়ে তুলতে হবে আরও বেশি করে মৎস্য খামার যা পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সাহায্য করবে। এমনি একটি প্রযুক্তির নাম ‘পতিত পুকুরে মৎস্য চাষ’ যা আমাদের দারিদ্র্যমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ প্রযুক্তি যেমন সহজ তেমনি দরিদ্র জনগণের জন্য উপযোগী। এ দেশের বেশিরভাগ লোক কৃষিজীবী এবং গ্রামে বাস করে। মৎস্য চাষ এসব গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক আয় রোজগারের একটি অংশ। প্রতি বাড়ির আনাচে-কানাচে পতিত পুকুরে মৎস্য চাষ করা যায়। মৎস্য চাষে যে মনমানসিকতা প্রয়োজন এ দেশের মানুষের তা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু এদের পরিকল্পিত উপায়ে মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করা।


মৎস্য চাষ প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজ। এর সাহায্যে আমাদের দেশের শিক্ষিত ও নিরক্ষর লোকজন স্বাবলম্বী হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মৎস্য চাষে যে মনমানসিকতা প্রয়োজন এ দেশের মানুষের তা রয়েছে। প্রয়োজন শুধু এদের পরিকল্পিত উপায়ে মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করা।


মৎস্য চাষ প্রযুক্তি অত্যন্ত সহজ। এর সাহায্যে আমাদের দেশের শিক্ষিত ও নিরক্ষর লোকজন স্বাবলম্বী হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় মৎস্য চাষের জন্য প্রয়োজন উন্নত জাতের বা রোগমুক্ত পোনা, যা দ্রুত বাড়তে পারে। কিছু নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে মাছের পোনা কয়েক মাসের মধ্যে দ্রুত বাড়তে পারে।


জমিতে আগাছা থাকলে যেমন ফসল ভালো হয় না তেমনি পুকুরে ছোট ও রাক্ষুসে মাছ থাকলে ফলন ভালো হয় না। রাক্ষুসে মাছ হলো শোল, গজার, টাকি প্রভৃতি। এরা মাছের বাচ্চা খেয়ে ফেলে তাই মাছ চাষের শুরুতে পুকুরের সব পানি শুকিয়ে রাক্ষুসে মাছ অপসারণ করতে হবে। তলায় বেশি কাদা থাকলে তা তুলে মেরামত করা যেতে পারে। বড় গাছের ছায়া পুকুরে পড়লে ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে। পুকুরের গভীরতা এমন হতে হবে যাতে শুকনো মৌসুমে অন্তত সাড়ে তিন হাত পানি থাকে। প্রথম অবস্থায় পুকুরে চুন দিতে হবে। প্রথমে একটি পাত্রে চুন ফুটিয়ে ঠা-া হয়ে গেলে পানি মিশ্রিত চুন পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। চুনের মাত্রা প্রতি শতাংশে এক কেজি, পুকুরে চুন দেয়ার পাঁচ দিন পর সার দিতে হবে। জৈব ও রাসায়নিক উভয় ধরনের সার পুকুরে দেয়া দরকার। জৈবসার হিসেবে গোবর ও হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা দেয়া যায়। প্রতি শতাংশে এসব সারের মাত্রা ইউরিয়া ১২৫ গ্রাম, টিএসপি ৬৫ গ্রাম এবং এমপি ২০ গ্রাম। জৈব ও রাসায়নিক এ দুই ধরনের সার একসাথে  একটি পাত্রে পানির মধ্যে ভালোভাবে গুলে নিতে হবে। তারপর এ সার সব পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুর তৈরি হওয়ার ১০-১৫ দিন পর ১০-১৫ সেন্টিমিটার সাইজের সুস্থ ও সবল পোনা ছাড়তে হবে। পুকুরের বিভিন্ন গভীরতায় ভিন্ন ভিন্ন গভীরতায় খাবার খায়। এজন্য বেশি উৎপাদন পেতে হলে পুকুরে একসঙ্গে ৭-৮ ধরনের মাছ ছাড়তে হয়। বিভিন্ন ধরনের পোনার আকার সমান হলে ভালো হয়। শুধু প্রাকৃতিক খাবারে মাছের ফলন ভালো হয় না। এজন্য পোনা ছাড়ার পর দিন থেকে খাবার দিতে হবে। মাছের মোট ওজনের শতকরা ২ ভাগ হারে প্রতিদিন খাবার দিতে হবে। যেমন পুকুরে বিভিন্ন মাছের মোট ওজন যদি ১০০ কেজি হয় তবে প্রতিদিন মাছের খাবার দিতে হবে ২ কেজি। যে পরিমাণ খাবার দিতে হবে তার অর্ধেক হবে কুঁড়া এবং বাকি অর্ধেক হবে সরিষার খৈল ও চালের কুঁড়া যা একটি হাঁড়িতে এক রাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। পর দিন সকালে খৈল ও কুঁড়া দিয়ে গোল বল বানাতে হবে। খাবার দেয়ার আগে পুকুরের চার কোণায় চারটি হাঁড়ি বসিয়ে দিতে হবে। এ হাঁড়িগুলোর মুখ বড় হওয়া দরকার। হাঁড়িগুলো পানিতে এক মিটার (২ হাত) নিচে রাখলে ভালো হয়।


বর্ষা পরবর্তী মাছ চাষ :  প্রতি বছরের মতো এবার বর্ষা মৌসুমে নদ-নদীর উপচেপড়া এবং অতি বৃষ্টিতে জমা পানিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠ-ঘাট জলাবদ্ধতার রূপ নিয়েছে। বর্ষা চলে যাওয়ার পরে  এসব স্থানে ৪/৫ মাস কিছু কিছু জায়গায় প্রায় বছর ধরে পানিবদ্ধ থাকে। তাই ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে এ জলার উপযুক্ত ব্যবহার তথা মাছ চাষ করেও আর্থিক সঙ্গতি লাভ করা সম্ভব। ইতঃপূর্বে এ জাতীয় বিল থেকে রুই জাতীয় মাছ ছাড়াও চিতল, বোয়াল, ফলি, পাবদা, রয়না, বাঁশপাতা, মলা, ঢেলা ইত্যাদি মাছ এবং প্রচুর পরিমাণে মাগুর, কৈ, শিংসহ প্রায় ২৬০ প্রজাতির মাছ উৎপন্ন হলেও বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব এবং কৃষিজমিতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য তা শূন্য হয়ে পড়েছে। যে কারণে সুষ্ঠুভাবে মাছ চাষ করে বিশাল এ পানিসম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের মোট উৎপাদিত মাছের ২২ ভাগ উৎপাদন সম্ভব এবং প্রচুর বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।


ব্যবস্থাপনা : বিলে সাধারণত স্থানীয় মালিকানা এবং সরকারের খাসজমি বিদ্যমান থাকে। সে কারণে সরকার স্থানীয় বেকার যুবক ও দরিদ্র ব্যক্তিদের সমন্বয়ে দল গঠন করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে মাছ চাষ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।


যেভাবে মাছ চাষ করতে হবে : বন্যাকবলিত এলাকায় মাছ চাষের জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা যায়। যেমন-


. পেন তৈরির মাধ্যমে : বড় বড় বিলের কিছু এলাকা নিয়ে বাঁশ, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি দিয়ে মাছের নিরাপদ আশ্রয়স্থল সৃষ্টি করে তার চারপাশে বেড়া বা জাল দিয়ে পেন তৈরি করা যায়। এরপর রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত মাছ সরিয়ে ৫/৮ ইঞ্চি পরিমাপের পোনা প্রতি শতাংশে ২২০টি (রুই ও রুইজাতীয়) ছাড়া যায়। এ পদ্ধতির মাছ চাষের ক্ষেত্রে পোনার দেহের মোট ওজনের ৩ ভাগ হারে খৈল, ভুষি, কুঁড়া প্রভৃতির সমন্বয়ে খাবার প্রতিদিন প্রয়োগ করতে হবে।


. খাঁচা তৈরির মাধ্যমে : প্লাবিত জলাশয়ের গভীর স্থানে খাঁচা তৈরি করে মাছ উৎপাদন করা যায় তবে এ পদ্ধতিতে তেলাপিয়া বা নাইলোটিকার চাষ করলে কম খরচে অধিক উৎপাদন আশা করা যায়।


. কাঠা বা কমর তৈরির মাধ্যমে : কাঠা বা কমর তৈরির মাধ্যমে গাছপালার ডাল দিয়ে মাছের আবাসস্থল তৈরি করে দিতে হয়। পশুর ভুঁড়ি এবং তার বর্জ্য অংশ দিয়ে কাঠা দিলে মাছগুলো আশ্রয় ও খাদ্যের আশায় এখানে একত্র হয়। এছাড়া গাছপালার ঝাঁক থেকে সৃষ্ট শ্যাওলা খেয়ে মাছ বড় হতে থাকে। প্রতি তিন মাস পর পর ঝাঁক তুলে বড় মাছগুলো বাজারজাত করলে আর্থিক লাভ হয় বেশি।


. ধানক্ষেতে মাছ চাষ : অপেক্ষাকৃত নিচু জমির পাড় দিয়ে জমিতে পানি ঢোকানোর পর পাড় মেরামত করে ধানের সাথে বা মেয়াদকালীন সময়ের জন্য ধানি জমিতে মাছ চাষ করা যায়। এ পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশ জলাশয়ের জন্য ৩০টি সরপুঁটি, ২০টি কমন কার্প হিসেবে পোনা ছাড়তে হয়। মাছের মল সার হিসেবে ব্যবহার হওয়ায় এ জমিতে ধানের ফলন বেশি হয়।


মাছ আহরণ কাল : উপরোক্ত পন্থা অবলম্বন করার পর মাছ চাষে পোনা মজুদ হতে ৩-৪ মাস অতিবাহিত হলে বড় মাছগুলো তুলে নেয়া যায়। সাধারণত ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের অর্থাৎ স্থানীয় ভাষায় হোটেল সাইজ মাছ তুলে দিয়ে নতুন করে ২০ ভাগ অধিক হারে পোনা ছাড়তে হয়। এ পদ্ধতিতে আর্থিক লাভ অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

 

আফতাব চৌধুরী*
* সাংবাদিক ও কলামিস্ট,  ব্লক-এ, শাহজালাল উপশহর, সিলেট


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon